ঢাকা,রোববার, ৫ মে ২০২৪

লইট্টা মাছে সয়লাব কক্সবাজার 

আতিকুর রহমান মানিক ::

লইট্যা মাছে সয়লাব হয়ে গেছে কক্সবাজার। সাম্প্রতিককালে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সামুদ্রিক লইট্যা মাছ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ায় সর্বত্রই বিক্রি করা হচ্ছে ।

এর বিকিকিনি ছড়িয়েছে মাছ বাজারের বাইরেও। পর্যটন শহরের অলি-গলিসহ জেলাব্যাপী হাট বাজারে এখন আকছার বিক্রি হচ্ছে লইট্যামাছ। সাগর থেকে মাছ আহরণ করে ফিরে আসা জেলে আব্দুল কাইয়ুম জুয়েল বলেন, বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে এখন বড় সাইজের লইট্যা মাছের প্রাচুর্য দেখা যাচ্ছে। মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমে সোনাদিয়া পয়েন্ট,  উখিয়া-ইনানী উপকুলের অদুরে রেজু মোহনা, টেকনাফ পাহাড় শ্রেণী বরাবর পশ্চিম দিকের সমুদ্র ও বাহাড় ছড়া-শামলাপুর উপকুলের বিপরীতে সাগরে এখন প্রতিদিন ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে লইট্যা মাছ। অনেক সময় দৈনিক ক্ষেপ মেরে দিনে দিনেই ফিরে আসছেন জেলেরা। শহরের বাজারঘাটা, ফায়ার সার্ভিস এলাকা, হাসপাতাল রোড, পানবাজার সড়ক, আদালত সংলগ্ন এলাকা ও বিমান বন্দর সড়কের মাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে এর বিকিকিনি। মাছ বিক্রেতা হামিদ সিকদার জানান, বড় সাইজের লইট্যা মাছ প্রতি কেজি ১০০/ ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

চিকিৎসক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা জানান, লইট্টা মাছে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। একে ইংরেজিতে বলা হয় Bombay Duck। কিন্তু শুনতে হাঁস মনে হলেও আসলে বৃটিশদেরই দেয়া এই নাম। বৃটিশ আমলে ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে লইট্টা শুটকি মালগাড়ি মেইল ট্রেনে বোম্বে আসতো।

বৃটিশরা এই লইট্টা শুটকির চালানকে বলতো ‘মেইল’ বা ‘ডাক’। সেই থেকে ‘বোম্বে ডাক’। লইট্টা মাছ স্বস্তা মাছ। দামে স্বস্তা হলেও পুষ্টিতে ভরপুর এই লইট্টা মাছ। লইট্টা মাছ প্রোটিনে ভরপুর।

যখন লইট্টা মাছকে শুটকি করা হয়, তখন এই প্রোটিনের পরিমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর প্রোটিন আমাদের শরীরের টিস্যু গঠনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।

এ ছাড়াও লইট্টা মাছে থাকা প্রোটিন শরীরের হরমোন, এনজাইম এবং অন্যান্য কেমিক্যালের ভারসাম্য বজায় রাখে।

লইট্টা মাছে রয়েছে অতি উপকারী ওমেগা-৩-ফ্যাটি এসিড। এটি মানুষের শরীরের রক্তনালীগুলোকে পরিস্কার রেখে হার্ট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

হার্টের সুস্বাস্থ্যের জন্যে লইট্টা মাছে থাকা ওমেগা-৩-ফ্যাটি এসিডের কাজ বহুমাত্রিক যেমন, অতিরিক্ত রক্তজমাট বাঁধা প্রতিহত করা, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের লেভেল কমানো, রক্ত-সঞ্চালন বাড়ানো ইত্যাদি।

লইট্টা মাছ আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্যে খুবই উপকারি। এই মাছের তেল দারুন এক  ব্যথানাষক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও লইট্টা মাছ কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। লইট্টা শুটকিতে থাকা ক্যালসিয়াম উচ্চ-রক্তচাপ কমায়।

এছাড়াও এই ক্যালসিয়াম পিরিয়ড শুরুর প্রাককালে নারীদের যে মুডজনিত মানসিক সমস্যা হয় তা কমায়। লইট্টা শুটকিতে রয়েছে প্রচুর আয়রন। যারা রক্তাল্পতায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি দারুণ কার্যকরি।

লইট্টা মাছ হিমোগ্লোবিন তৈরি, পেশির শক্তিবৃদ্ধি, ব্রেইনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন, শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ইনসমনিয়া কমানো, শক্ত হাঁড় ও দাত তৈরি, পরিপাকে সহায়তা, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, ত্বক ও ঠোঁটের সুস্বাস্থ্যসহ অসংখ্য স্বাস্থ্য-উপকার করে থাকে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (সদর) ডঃ মঈন উদ্দীন আহমদ জানান, এখন লইট্টা মাছের মৌসূম, তাই সাগরে এ প্রজাতির মাছ বেশী পড়ছে। সহনশীল আহরন ও নিষিদ্ধ জাল পরিহার করলে ভবিষ্যতে উৎপাদন ও আহরন আরো বাড়বে বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: